এবার আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে এক বিশাল মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম, আফ্রিকার বৃহত্তম এবং ইসলামের পবিত্র শহরগুলোর বাইরে বৃহত্তম আলজিয়ার্সের এই গ্রেট মসজিদ। এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
বলা হয়েছে, দ্য গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্সের প্রার্থনা কক্ষে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারবে। আলজিয়ার্সের গ্রেট মসজিদে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনার রয়েছে—যার উচ্চতা ২৬৫ মিটার (৮৬৯ ফুট)। রাষ্ট্রীয় খরচে ২০১০ এর প্রায় পুরো দশক ধরেই একটি চীনা নির্মাণ সংস্থা দ্বারা চলেছে এই মসজিদ তৈরির কাজ।
আলজেরিয়ার শক্তি এবং ধর্মের প্রতীক হিসেবে স্থাপনাটিকে তৈরি করতে বারবার বেড়েছে এর নির্মাণ ব্যয়। মসজিদটির নকশায় রয়েছে আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের সমন্বিত ছোঁয়া। এতে আলজেরিয়ার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে আরব এবং উত্তর আফ্রিকার সমৃদ্ধিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
মসজিদটিতে রয়েছে হেলিকপ্টার অবতরণের একটি প্যাড। একটি লাইব্রেরিও আছে এখানে। সেখানে রাখা যাবে প্রায় ১০ লাখ বই। মসজিদের উদ্বোধন মুসলিমদের ভালো ও পরিমিতিবোধের দিকে ধাবিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মুসলিম ওলামাদের বিশ্ব ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি আলী মোহাম্মদ সালাবি।
১৯৯০ এর দশক ধরে চলা এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে ইসলামপন্থীদের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে পরাস্ত করেছিল আলজেরিয়ার সরকারি বাহিনী। এরপর থেকেই আলজেরিয়ায় ইসলামের একটি মধ্যমপন্থী পরিচিতির বিকাশ ঘটানোকে অগ্রাধিকার দেয় সরকার।
আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি আবদেলমাদজিদ টেবোউন মসজিদটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। তবে মসজিদটি প্রায় পাঁচ বছর ধরেই পর্যটক এবং রাষ্ট্রীয় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কেবল বিলম্বিত হয়েছে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। আসন্ন রমজানে নামাজ আদায় যাতে সম্ভব হয় সে কারণে মসজিদটি আনুষ্ঠানিকভাবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হলো।
তবে প্রকল্পটির বিলম্ব ঘিরে ছিল নানা বিতর্ক। সাত বছর ধরে নির্মাণাধীন এই মসজিদ যে স্থানে অবস্থিত সে জায়গাকে বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করেছিলেন। তবে এই সতর্কতার ব্যাপারটি গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এপিএসে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বীকার করা হয়নি।
অনেক আলজেরিয়ানই এই প্রকল্পের সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এই অর্থে সারা দেশে অন্তত চারটি হাসপাতাল নির্মাণ করা যেত। প্রকল্পের প্রাথমিক বাজেট ধরা হয়েছিল প্রায় ৯০ কোটি ডলার। মসজিদটি ছিল মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদেলাজিজ বুতেফ্লিকার একটি প্রকল্প।
তিনি চেয়েছিলেন যে, মসজিদটিকে তার উত্তরাধিকার হিসেবে ‘আবদেলাজিজ বুতেফ্লিকা মসজিদ’ বলা হোক। তবে ২০১৯ সালে বিদ্রোহের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া বুতেফ্লিকার এই ইচ্ছে পূরণ হয়নি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী এটি উদ্বোধনও করতে পারেননি তিনি। মসজিদের নির্মাণের সঙ্গে একটি প্রধান জাতীয় সড়ক এবং ১০ লাখ নতুন আবাসন ইউনিট নির্মাণেও রয়েছে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ।